ইন-সিটু সংরক্ষণ | ইন-সিটু সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্য | ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা | ইন-সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি |

 ইন-সিটু সংরক্ষণ

    জীবকূলকে তার স্বাভাবিক বাসস্থানের মধ্যে সংরক্ষণ করা হলে, তাকে ইনসিটু সংরক্ষণ বলে। অর্থাৎ কোন বিপন্ন প্রজাতিকে নিজ বাসস্থানে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি হল ইনসিটু সংরক্ষণ

           "Insitu reservation is the process of protecting and endangered plant or animal species in its natural habitat".

National Park
National Park


·        ইন-সিটু সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্য–

 এই সংরক্ষণে একটি বা একই প্রজাতির জীবকূল সংরক্ষণ করা হয় না।

• জানা অজানা সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল সংরক্ষণ করা হয়।

• এক্ষেত্রে সমগ্র বাস্তুতন্ত্রটিকে সংরক্ষণ করা হয়।

• এক্ষেত্রে খাদ্য শৃঙ্খল স্বাভাবিক থাকে, তাই জীবকূলের অসুবিধা হয় না।

• এই সংরক্ষণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করা যায় ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

• জীব বৈচিত্র্যের কৃত্রিম বাসস্থান নির্মাণের প্রয়োজন হয় না।

 সংরক্ষিত স্থানে বেশি মানুষের প্রবেশের অনুমতি থাকে না।

 পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।

 

∆  ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা–

      • সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের সংরক্ষণ করা হয়।

• কোন প্রজাতির সংরক্ষণের সহজ উপায় হল, তারা যে বাসস্থানে জন্মায় সেখানে যথাযথ সংরক্ষণের ফলে এই প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কিত বহু প্রজাতি সংরক্ষিত হয়।

• একটি প্রজাতি কেবল একটি বাস্তুতন্ত্রের অংশ নয়, আশেপাশের বহু প্রজাতিকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

 এই সংরক্ষণে কোন প্রজাতি বাঁচার জন্য প্রতিযোগিতা করার দক্ষতা অর্জন করে।

 জীব বৈচিত্র্যের তালিকাভুক্ত হয়নি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি এমন দেশে এই সংরক্ষণ জরুরি।

• আবিষ্কৃত প্রজাতি যেসব অঞ্চলে রয়েছে সেখানে এই সংরক্ষণের প্রয়োজন জরুরি।

• যেসব বীজ শুকিয়ে সীড ব্যাঙ্কে রাখলে অঙ্কুরিত হয় না সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুব জরুরী।

·        ইন-সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি-

a. জাতীয় উদ্যান (National Park) - জীব বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এক বা একাধিক বাস্তুতন্ত্রের অধীনে যে বিশাল সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হয়, তাহা জাতীয় উদ্যান। কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে জীববৈচিত্র ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গঠিত। এই উদ্যান স্থাপনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা দ্বারা শিক্ষা, বিজ্ঞান, গবেষণা ও বিনোদন ক্ষেত্রের উন্মেষ ঘটানো হয়।

পৃথিবীতে জাতীয় উদ্যান (National Park) এর সংখ্যা প্রায় 4000 টি। ভারতে 105 টি এবং পশ্চিমবঙ্গে 6 টি জাতীয় উদ্যান (National Park) আছে। ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যানটি হল উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (1936) পূর্বে এর নাম ছিল হ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। পৃথিবীর প্রথম জাতীয় উদ্যান (National Park) হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। পৃথিবীর বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান (National Park) হল নর্থ ইস্ট গ্রীনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক।

উদাহরণ:- পৃথিবীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাতীয় উদ্যান (National Park) হল- সেরেনগেটি (তানজানিয়া), গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র), কাকাদু (অস্ট্রেলিয়া) প্রভূতি। ভারতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাতীয় উদ্যান (National Park) হল- জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (উত্তরাখণ্ড), হেমিস ন্যাশনাল পার্ক (জম্মু ও কাশ্মীর, এটি আয়তনে সবথেকে বড়ো ন্যাশনাল পার্ক), কানহা ন্যাশনাল পার্ক (মধ্যপ্রদেশ), কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক (আসাম), সেলিম আলি ন্যাশনাল পার্ক (গোয়া), গির ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক (গুজরাট), সুলতানপুর ন্যাশনাল পার্ক (হরিয়ানা), রাজিব গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক (কর্নটক), সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক, পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক (কেরালা), রনথম্বোর ন্যাশনাল পার্ক (রাজস্থান), কানু ন্যাশনাল পার্ক (মহারাষ্ট্র, এটি নতুন ন্যাশনাল পার্ক) প্রভূতি। পশ্চিমবঙ্গের ন্যাশনাল পার্কগুলি হল- বক্সা ন্যাশনাল পার্ক, সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক, গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক, নেওয়া ন্যাশনাল পার্ক, সিঙ্গালিয়া ন্যাশনাল পার্ক, জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক।

 

b. অভয়ারণ্য (Sanctuary)- 1972 খ্রিস্টাব্দে ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইন অনুসারে কোন অরন্যের বন্যপ্রাণী, জীবাশ্ম, বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ করা হলে তাকে অভয়ারণ্য বলে। এটি সংরক্ষিত বনভূমির অংশ এবং রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। বন্য প্রাণী হত্যা, শিকার এখানে নিষিদ্ধ।

           ভারতে বর্তমানে অভয়ারণ্য রয়েছে 552 টি। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আছে 15 টি। ভারতে বর্তমানে অভয়ারণ্যগুলির মধ্যে53 টি ব্যাঘ্র প্রকল্প রয়েছে।

উদাহরন- গরুমারা টাইগার রিজার্ভ (পশ্চিমবঙ্গ), পালামৌ (ঝাড়খন্ড), কেওলাদেও বার্ড রাজস্থান (ভরতপুর),‌ Wild ass Sanctunary (গুজরাট নারগু), Wildlife Sanctuary  (অরুণাচল প্রদেশ) প্রভূতি।

c.       সংরক্ষিত বনাঞ্চল (Reserve Forest)- রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অরণ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ কিন্তু গবেষণার কাজে প্রবেশ করা যায়, তাকেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে।

উদাহরণ- পালানি হিলস (তামিলনাড়ু)

d. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserves)- যেখানে কোন বিপন্ন প্রজাতির বা গোষ্ঠীর প্রাণী অথবা উদ্ভিদকে তাদের জীবনধারা অনুযায়ী সুদীর্ঘকাল ধরে সুরক্ষিত করা যায়, তাকে বলে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserve)। বর্তমানে ভারতে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserves)-এর সংখ্যা 18 টি এবং পশ্চিমবঙ্গে 1 টি। পৃথিবীতে Biosphere Reservesএর সংখ্যা 727 টি।

Biosphere Reserves in india
Biosphere Reserves in india


বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ তিনটি অঞ্চল বা অংশ থাকে-

  i. কেন্দ্রীয় অঞ্চল বা Core Zone -

• এর কেন্দ্রভাগে জীবকূল ও বাস্তুতন্ত্র অতিমাত্রায় সুরক্ষিত থাকে।

• এখানে মানুষের ক্রিয়া-কলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

 পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ছাড়া আর কিছুর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় না।

 এটি অত্যন্ত কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত।

• আইনগতভাবে সংরক্ষিত।

  ii. বাফার জোন (Buffer zone)/আঘাত নিবারণী অঞ্চল -

• কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বেষ্টন করে থাকা এটি মধ্যবর্তী অঞ্চল।

• এখানে শিক্ষা গবেষণামূলক কাজকর্ম, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্ম নিষিদ্ধ।

• অনুমোদিত ক্রিয়া-কলাপ গুলির উপর কঠোর নজরদারি থাকে। তবে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকার ক্ষেত্রে 2013 খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট মানুষের যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে।

  iii. অন্তর্বর্তী এলাকা বা (Transitional Zone)-     

• এটি সংরক্ষিত জীবমন্ডলের সবচেয়ে বাইরের অংশ।

 এখানে প্রথাগত ভূমি ব্যবহার অনুমোদিত হয়।

       • স্থায়ী বাসিন্দাদের বসতি, পর্যটন শিল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

উদাহরন- সুন্দরবন (পশ্চিমবঙ্গ), নন্দাদেবী (উত্তরাখণ্ড), নীলগিরি (তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালা), নকরেক (মেঘালয়) প্রভূতি।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ তিনটি অঞ্চল বা অংশ
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ তিনটি অঞ্চল বা অংশ 


অন্যান্য ইনসিটু পদ্ধতি-

 জাতীয় ভূমিব্যবহার নীতি

 সংরক্ষণ পরিকল্পনা

 অসংখ্য আবাসস্থলের ব্যবস্থাপনা

 ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুক্ষেত্রের সংস্কার

 প্রজাতীয় বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষীয় আইন বিনোদনমূলক শিকার

 সংরক্ষিত জীবমণ্ডল

 বাস্তু তন্ত্রের সংযোজন পথের ব্যবস্থাপনা

 সর্বোপরি মনুষ্য সচেতনতা


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products