স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের পূর্বশর্ত | এল. সি. কিং এর মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র তত্ত্ব বা পেডিপ্লেন গঠন তত্ত্ব |

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের পূর্বশর্ত (Preconditions of the normal cycle of Erosion)



স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের পূর্বশর্ত (Preconditions of normal cycle of Erosion) কি কি?

    স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের কাজ ঠিকমতো হওয়ার জন্য ডেভিস কতকগুলি আদর্শ অবস্থার কথা বলেছেন।এগুলি হল-

1. সমুদ্র থেকে উত্থান- ভূমিভাগটি একটি ভূতাত্ত্বিক একক (Geographical Unit) হিসেবে সমুদ্র থেকে উত্থিত হবে।

2. উলম্ব এবং দ্রুত উত্থান - প্রধানত ভূআলোড়নের জন্য ভূমিভাগটির উলম্ব উত্থান ঘটবে এবং প্রারম্ভিক উত্থানের হার যথেষ্ট দ্রুত হবে। এছাড়া উত্থানপর্ব চলার সময় ভূমিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হবে না।

3. ভূমি ভাগের বিভিন্ন গঠন- উত্থিত ভূমিভাগটির গঠন ভাঁজযুক্ত, চ্যুতিযুক্ত ইত্যাদি হতে পারে।

4. শিলার গঠনগত সমতা- ভূমিভাগের সর্বত্রই শিলার গঠনগত সমতা থাকবে এবং পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলা থাকবে।

5. ভূমি ভাগের সমুদ্রমুখী ঢাল- ভূমিভাগের প্রাথমিক ঢাল হবে সমুদ্রমুখী।

6. সহজাত বন্ধুরতা- ভূমিভাগটির উত্থানের সময় বিকৃতি ও তারতম্যজনিত সহজাত বন্ধুরতা থাকবে।

7. আদ্র জলবায়ু- অঞ্চলটির জলবায়ু হবে আদ্র, যাতে নদীগোষ্ঠী সৃষ্টি হয় এবং নদীর মাধ্যমে হ্ময় প্রাধান্য লাভ করে।

8. অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া- নদীর ক্ষয় ছাড়াও আবহবিকার, পুঞ্জিতক্ষয় (Mass wasting) প্রভৃতি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলি ভূমিরূপের বিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

9. পর্যায় অনুসরণ- ভূমিরূপের বিবর্তন কয়েকটি নির্দিষ্ট পর্যায় (যৌবন, পরিণত ও বার্ধক্য) অনুসারে ঘটতে থাকবে।

10. সমপ্রায়ভূমি গঠন- ক্ষয়ের শেষ পর্যায়ে সমগ্র ভূমিভাগটি একটি প্রায় সমতল সমপ্রায়ভূমিতে (peneplain) পরিণত হবে এবং তার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকবে।

11. ক্ষয়ের শেষ সীমা- উত্থিত ভূমির ক্ষয়কার্য সমুদ্রপৃষ্ঠ পর্যন্ত চলতেই থাকবে এবং এই সমুদ্রপৃষ্ঠ বা সমুদ্রসমতলই হবে ক্ষয়ের শেষ সীমা (Base level of Erosion)।

12. ভূমিভাগের স্থিতিশীলতা- ক্ষয় চলাকালীন ভূমিভাগের উত্থান ঘটবে না। যদি ঘটে তাহলে একটি নতুন ক্ষয়চক্রের সূচনা হবে।


এল. সি. কিং এর মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র তত্ত্ব বা পেডিপ্লেন গঠন তত্ত্ব (L.C King's arid cycle theory or theory of pediplanation):

দক্ষিণ আফ্রিকার মরু, মরুপ্রায় ও সাভানা অঞ্চলের ভূমিরূপ সম্পর্কে দীর্ঘ গবেষণার পর 1948 সালে এল.সি.কিং মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র সম্পর্কে একটি তথ্য প্রকাশ করেন, যার নাম Theory of pediplanation বা পেডিপ্লেন গঠন তত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো পর্যায়ক্রমে যৌবন, পরিণত বা প্রৌঢ় এবং বার্ধক্য অবস্থার মধ্য দিয়ে মরু অঞ্চলের ভূমিরূপ পেডিপ্লেন বা পাদদেশীয় সমভূমিতে পরিণত হয়। কিং এর মতে আগেকার কোন পেডিপ্লেনের উত্থানের মাধ্যমে মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের সূচনা হয়, যাকে বলা হয় যৌবন পর্যায়।

1. যৌবন পর্যায় (Youth Stage)- যৌবন অবস্থায় মরু অঞ্চলের উচ্চভূমি বা পর্বতগুলির প্রান্তদেশ যথেষ্ট খাড়া ঢালযুক্ত হয়। একে কিং বলেছেন ভৃগু। এরপর ক্ষয়কাজের ফলে ওখানে প্রথমে পেডিমেন্ট (pediment) এবং পরে ইনসেলবার্জ (lnselberg) গঠিত হয়।

a. আবহবিকার ও জলধারার কাজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ধীরে ধীরে ওই ভৃগু বা খাড়া ঢালের সমান্তরাল পশ্চাদপসরণ ঘটে এবং সেখানে পেডিমেন্ট গঠিত হয়।

b. এইভাবে পেডিমেন্টের ক্রমশ প্রসার ঘটলে জলবিভাজিকাসমূহ বা দুই উপত্যকার মধ্যবর্তী উচ্চভূমিগুলি সংকীর্ণ হতে থাকে এবং শেষে ওগুলি খাড়া ঢালযুক্ত অবশিষ্ট পাহাড় বা ইনসেলবার্জে পরিণত হয়। ক্ষয় কার্যের তীব্রতার পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন আকৃতির ইনসেলবার্জ গড়ে ওঠে।

c. ক্ষয়কার্য কম হলে যে বৃহদাকৃতির ইনসেলবার্জ সৃষ্টি হয় তাকে বলে মেসা (Mesa)। আবার, ক্ষয়কার্য বেশি হলে যেসব ক্ষুদ্রাকৃতি ইনসেলবার্জ গঠিত হয় সেগুলিকে বলে বুটেস‌ বা বিউটস (Buttes)। এর মধ্যে গোলাকার ইনসেলবার্জকে বনহার্ট (Bornhardt)বলে।

2. পরিণত পর্যায় (Mature Stage)- এরপর পরিণত অবস্থায় পেডিমেন্টের  আরো প্রসার ঘটে। তখন অনেক ইনসেলবার্জই অবলুপ্ত হয় এবং এর ফলে ইনসেলবার্জ তথা জলবিভাজিকার উভয় দিকের পেডিমেন্ট  সংযুক্ত হয়ে একটি বিস্তৃত সমভূমি বা পেডিপ্লেন গড়ে ওঠে।

3. বার্ধক্য পর্যায় (Old Stage)- ক্ষয়চক্রের  একেবারে শেষ পর্যায়ে অধিকাংশ ইনসেলবার্জই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং এর ফলে তখন ভূমির বন্ধুরতা তথা ঢালও বিশেষ থাকে না। সেই সময় অনেকগুলি পেডিপ্লেন পরস্পর সংযুক্ত হয়ে সুবিস্তৃত পেডিপ্লেন গঠিত হয়।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products