জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব | দ্বাদশ শ্রেনির ভূগোল নোটস | Evs Pedia |

 

জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব
জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব

জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব

    মানব জীবনে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অপরিসীম। জীববৈচিত্র্য একদিকে যেমন পরিবেশের ভৌম জলের ভাণ্ডার পূরণে, জলবায়ুর স্থায়িত্ব রক্ষায়, মৃত্তিকার ক্ষয় রোধে, ভৌত রাসায়নিক স্থিতাবস্থায় ও বায়ুর রাসায়নিক গঠন ইত্যাদির স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা করে তেমনি জীববৈচিত্র্য বিভিন্ন জীব-প্রজাতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে। বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য ও মানব জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায় জীব বৈচিত্র্যের ভূমিকা আলোচনা করা হলো-

➧ ব্যবহারিক গুরুত্ব- মানবজীবনে উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের জীবনে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় 4 হাজার 500 রকমের দ্রব্য আসে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির থেকে। অন্নবস্ত্র ও কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ সম্পূর্ণরূপে জীব-প্রজাতির ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য ওষুধ পানীয়, খেলার সরঞ্জাম, কাগজ, গৃহপালিত পশু প্রভৃতি এসেছে বন্য উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির থেকে। সবুজ বিপ্লব, শ্বেত বিপ্লব নীল বিপ্লব প্রভৃতি জীব-বৈচিত্র্যের সমৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বনজ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে জিন -পরিবর্তিত খাদ্যদ্রব্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন বেড়েছে এবং বর্ধিত জনসংখ্যার মুখে প্রয়োজনমতো খাদ্যদ্রব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে।

➧ জলবায়ুর স্থায়িত্ব রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব- আবহাওয়ার বিশুদ্ধকরণ, বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ, জলীয়বাষ্প নির্গমন, অক্সিজেন প্রস্তুত প্রভৃতি কাজে উদ্ভিদ আবহাওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্ভিদ মাটি থেকে জল শোষণ ও বায়ুতে নির্গমন করায় পৃথিবীর জলচক্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

➧ ভূপৃষ্ঠস্থ জলের পরিশ্রুতকরণে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব- কচুরিপানা, বিভিন্ন প্রকার শৈবাল প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদ জলাভূমির জলে মিশ্রিত বিভিন্ন হ্মতিকারক ধাতব কণা ও হ্মতিকারক রাসায়নিক পদার্থ শোষণ করে জলকে পরিশ্রুত করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।তাই জলাভূমিকে "প্রকৃতির বৃক্ক বা কিডনি"(Nature's kidney) বলে।

➧ মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব- মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অপরিসীম। সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী শিলাসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে। এরপর জল ও বায়ুর উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কীটপতঙ্গ, কেঁচো জাতীয় প্রাণী মৃত্তিকা গঠন সম্পূর্ণ করে। মৃত্তিকায় উপস্থিত বিভিন্ন প্রকার নীলাভ সবুজ শৈবাল জৈব-রাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করে বিভিন্ন মৌলের আবর্তনে সাহায্য করে।

➧ সামাজিক গুরুত্ব- অর্থনীতিবিদগণ জীববৈচিত্র্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যে দেশের জীব-বৈচিত্র্য যত বেশি ভবিষ্যতে তাদের উন্নতির সম্ভাবনা ও ততবেশি। অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে তাদের জীবনযাত্রার মানের ও উন্নতি ঘটবে ।যেহেতু বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিবেশে অর্থ ও সুস্বাস্থ্যের ওপর মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে তাই জীববৈচিত্র্যের ওপর সামাজিক গুরুত্ব প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল।

 নৈতিক গুরুত্ব- জীববৈচিত্র্য যেহেতু বিভিন্ন প্রজাতির ধারক ও বাহক, মানুষ তাই জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে পৃথিবীর প্রত্যেক জীবকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট প্রজাতিগুলিকে সংরক্ষণের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে পারলে মানবসভ্যতা দীর্ঘস্থায়ী হবে।

➧ নান্দনিক গুরুত্ব- প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি প্রতিটি মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই মানুষ ছুটে চলে নদীর পাড়ে, সমুদ্রসৈকতে, নির্জন দ্বীপ অঞ্চলে অথবা পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে রয়েছে সমৃদ্ধ জীব-বৈচিত্র্য। বর্তমানে যেসব অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়েছে সেইসব স্থানে অসংখ্য মানুষ নির্মল আনন্দ উপভোগের জন্য পাড়ি দেয়। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিশেষ আকর্ষণের কথা মাথায় রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ইকোট্যুরিজম বা পরিবেশ বান্ধব পর্যটন গড়ে তোলা হচ্ছে।

➧ সম্ভাবনামূলক গুরুত্ব- পৃথিবীর কোন একটি প্রজাতি হয়তো মানবজীবনকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারে। ওই নির্দিষ্ট প্রজাতিটি চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে তা হয়তো সম্ভব হবেনা। পেনিসিলিনের ব্যবহারের পূর্বেই যদি ওই ছত্রাকটি চিরতরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেত, অথবা কুইনাইন আবিষ্কারের পূর্বেই সিঙ্কোনা গাছটি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হত তাহলে চিকিৎসাশাস্ত্র কীভাবে বিপর্যস্ত হত তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে পৃথিবীর প্রতিটি জীবকে সংরক্ষণ করা আশু প্রয়োজন।

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Random Products