জীববৈচিত্র্য সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর
1. জীববৈচিত্র্য কী?
উঃ- বিভিন্ন জীব ও অনুজীব যাদের নিজেদের মধ্যে
জিন, প্রজাতি ও বাস্তুতান্ত্রিক পার্থক্য আছে, তাদের একত্রে জীববৈচিত্র্য বলে।
2. জিন সংক্রান্ত বৈচিত্র্য কী?
উঃ- জীব উত্তরাধিকারের সূত্রে পূর্ববর্তী
প্রজন্ম থেকে যে গুণসম্পন্ন জিন সংগ্রহ করে, সেই জিনকে জিনসংক্রান্ত বৈচিত্র্য (ইংরেজিতে
জেনেটিক ডাইভারসিটি) বলে। জিনবৈচিত্র্য ঘটিয়ে নতুন প্রজাতির তুলো, ধান প্রভৃতি শস্য
তৈরি করা যায়।
3. প্রজাতি বৈচিত্র্য কী?
উঃ- প্রজাতি বলতে নিজেদের মধ্যে প্রজননে সক্ষম
জীবসমষ্টিকে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বিভিন্ন প্রজাতির জীবের সমাহারকে প্রজাতি
বৈচিত্র্য বলে।
4. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কী ?
উঃ- পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক
পরিবেশে উদ্ভূত বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী হরেকরকম জীবের সমাহারকে জীব সম্প্রদায়ের
বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।
5. আলফা বৈচিত্র্য কী?
উঃ- একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বাসভূমি অথবা
কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে প্রাপ্ত জীববৈচিত্র্যকে আলফা বৈচিত্র্য বলে।
6. বিটা বৈচিত্র্য কী ?
উঃ- আন্তঃগোষ্ঠী বা আন্তঃবাসভূমি জীববৈচিত্র্যকে
বিটা বৈচিত্র্য বলা হয়।
7. গামা বৈচিত্র্য কী?
উঃ- যেকোনো বৃহদায়তন ভৌগোলিক অঞ্চল (যেমন
– হিমালয় অঞ্চল)-এর মধ্যে পরিবেশ, প্রাকৃতিক বাসভূমি ও গোষ্ঠীগত বিভিন্নতার জন্য উদ্ভূত
জীববৈচিত্র্যকে গামা বৈচিত্র্য বলে।
৪. জীববৈচিত্র্যের বিনাশ কী?
উঃ- যখন কোনো প্রজাতির সর্বশেষ স্বতন্ত্র
জীবটি কোনো বংশধর না রেখে মারা যায়, তখন জীবের ওই নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনাকে প্রজাতির
বিলুপ্তি বা জীববৈচিত্র্যের বিনাশ বলে
9. রেড ডাটা বুক কী ?
উঃ- আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা
(International Union for Conservation of Nature and Natural Resources IUCN) বিপন্ন
বা লুপ্তপ্রায় জীবপ্রজাতিসমূহের একটি বিশদ তালিকা প্রকাশ করেন। এটি রেড ডাটা বুক নামে
পরিচিত।
10. গ্রিন ডাটা বুক কী ?
উঃ- যে তালিকায় অবলুপ্তির বিপদ থেকে মুক্ত
জীবপ্রজাতিসমূহের উল্লেখ থাকে, তাকে গ্রিন ডাটা বুক বলে ৷
11. ব্ল্যাক ডাটা বুক কী ?
উঃ- যে তালিকায় ধ্বংসসাধক বা হানিকর জীবপ্রজাতিসমূহের
উল্লেখ থাকে, তাকে ব্ল্যাক ডাটা বুক বলে।
12. লুপ্ত প্রজাতি কাকে বলে?
উঃ- যে প্রজাতির জীবকে বিগত 50 বছরে দেখা
যায়নি বা খোঁজ পাওয়া যায়নি, তাদের লুপ্ত প্রজাতি (Extinct) উঃ- Ex বলে। যেমন- মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার
হারলিক্যুইন ব্যাং।
13. বিপন্ন প্রজাতি কাকে বলে?
উঃ- যে প্রজাতির জীবের বিলুপ্তির আশঙ্কা আছে
এবং বিলুপ্তির কারণগুলি বর্তমান থাকলে যাদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা কম, তাদের বিপন্ন
প্রজাতি (Endangered) বলে।
যেমন— উদ্ভিদের মধ্যে সর্পগন্ধা, কলশপত্রী, গরান,
সুন্দরী ইত্যাদি। প্রাণীদের মধ্যে কস্তুরী মৃগ, একশৃঙ্খী গন্ডার, নীল তিমি, এশিয়াটিক
সিংহ ইত্যাদি।
14. বিপদাপন্ন প্রজাতি কাকে বলে?
উঃ- যে প্রজাতির জীব বিপন্নতার কারণগুলি বজায়
থাকলে, ভবিষ্যতে বিপদাপন্ন হতে পারে, তাদের বিপদাপন্ন প্রজাতি (Vulnerable) [V] বলে।
যেমন— শকুন, চড়াই।
15. বিরল প্রজাতি কাকে বলে?
উঃ- যে প্রজাতির জীবের সংখ্যা অল্প এবং যাদের
বর্তমানে বিপদাপন্ন বলা না হলেও ভবিষ্যতে যাদের অস্তিত্ব বিপদের সম্মুখীন হতে পারে,
তাদের বিরল প্রজাতি (Rare) [R] বলে।
➤ জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
16. জীববৈচিত্র্যের হটস্পট কী?
উঃ- জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ যে জীবভৌগোলিক অঞ্চলে
মানুষের নেতিবাচক কাজের প্রভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের বিশেষ ক্ষতি হচ্ছে, তাকে জীববৈচিত্র্যের
হটস্পট বলে। উদাহরণ— ভারতের
পশ্চিমঘাট, পূর্ব হিমালয়ের নেপাল ইত্যাদি।
17. মেগাডাইভার্স বা মেগা বায়োডাইভার্সিটি
বলতে কী বোঝায়?
উঃ- পৃথিবীতে জীবপ্রজাতির প্রাপ্তির ভিত্তিতে
যে যে অঞ্চলে সর্বাধিক জীব প্রজাতির অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়, সেই দেশকে “মেগাডাইভাস”
দেশ বা “মেগা-ডাইভার্সিটি”-র দেশ বলে। যেমন— ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, পেরু, ফিলিপিন্স,
চিন, মেক্সিকো ইত্যাদি। পৃথিবীতে 17টি “মেগাডাইভার্স” দেশ আছে।
18. জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ কী?
উঃ- যে পদ্ধতিতে কোনো অর্থনৈতিক বা শারীরবৃত্তীয়
গুণের অধিকারী জীবের প্রোটোপ্লাজমযুক্ত উন্নত কোশকে কোনো নিম্নশ্রেণির জীবের উন্নতি
ঘটানোর জন্য সংরক্ষিত করা হয়, তাকে জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ বলে। ইংরেজি পরিভাষায় একে
‘কনজারভেশন অব জার্মপ্লাজম’ বলা হয়।
19. ইন-সিটু সংরক্ষণ বা ইন-সিটু কনজারভেশন
কী?
উঃ- কোনো উন্নত বা বিরল, অবলুপ্তপ্রায় জীবকে
তার নিজস্ব বাসভূমি অর্থাৎ নিবাস বা বসতি এলাকার মধ্যে সংরক্ষণ করাকে ইন-সিটু কনজারভেশন
বলে। এই ধরনের সংরক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনভূমি ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
20. এক্স-সিটু সংরক্ষণ বা এক্স-সিটু কনজারভেশন
কী?
উঃ- কোনো উন্নত বা বিরল, অবলুপ্তপ্রায় বিপন্ন
জীবের প্রোটোপ্লাজমযুক্ত কোশ, ভ্রুণ, পরাগরেণু, শুক্রাণু, ডিম্বাণু প্রভৃতিকে চরম শৈত্য
অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে এক্স-সিটু কনজারভেশন বলে। বাংলা পরিভাষায় একে ‘নিবাস-দূরবর্তী
সংরক্ষণ’ বলে। ‘নিবাস-দূরবর্তী’ বা ‘প্রাকৃতিক বাসভূমি থেকে দূরে’-এ কথা বলার কারণ
হল, যে প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা দরকার, সেই প্রজাতির কোনো জীবের কোশ, শুক্রাণু, ডিম্বাণু
প্রভৃতিকে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে গবেষণাগারে সংরক্ষণ করা হয়।
21. সংরক্ষিত জীবমণ্ডল বা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
কী?
উঃ- যেখানে কোনো বিপন্ন প্রজাতি বা গোষ্ঠীর
প্রাণী অথবা উদ্ভিদকে তাদের জীবনধারা অনুসারে সুদীর্ঘকাল ধরে সুরক্ষিত রাখা যায়, তাকে
সংরক্ষিত জীবমণ্ডল বা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে। যেমন— পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার
রিজার্ভ। ভারতে 18টি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ আছে।
22. অভয়ারণ্য বলতে কী?
উঃ- অভয়ারণ্য বলতে সেইসব সংরক্ষিত বনভূমিকে
বোঝায় যেখানে কিছু বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী বসবাস করে, যেমন, দক্ষিণবঙ্গের লোথিয়ান
আইল্যান্ড (কুমির, ভোঁদড়, ময়ূর ইত্যাদি); উত্তরবঙ্গের গরুমারা অভয়ারণ্য (একশৃঙ্গী
গন্ডার হাতি, বাঘ ইত্যাদি)। ভারতে 515টি অভয়ারণ্য আছে।
23. জাতীয় উদ্যান কী ?
উঃ- জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক বলতে সেই সমস্ত অঞ্চলকে বোঝায় যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসহ সব ধরনের গাছপালা ও জীবজন্তুকে তাদের নিজস্ব পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইনটারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার অ্যান্ড নেচারাল রিসোর্সেস (IUCN)-এর উদ্যোগে সারা পৃথিবীর একশোর বেশি দেশে জাতীয় উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে।